—জীবন সৃষ্টির রহস্য—

         জীবন সৃষ্টি ইতিহাস কি?
কিভাবে জীবনের সৃষ্টি হয়েছিল?
প্রথম কোন্ জীবের সৃষ্টি হয়েছিল?
একটা জীব থেকে কিভাবে নতুন জীবের জন্ম হয়? জীবের উপাদান কি কি?
জীবদেহে জীবনের রহস্য কি ?
           জ্ঞানের বিকাশ, কৌতুহল বা স্বাভাবিকভাবেই উপরোক্ত প্রশ্ন গুলো আমাদের ভাবনার খোরাক জোগায়।
জীব সৃষ্টি হয় বিভিন্ন জড় বস্তুর সমন্বয়ে, যা জীবন দ্বারা সংগঠিত হয়। পৃথিবীর সমস্ত সজীব বস্তুর গঠন, প্রকৃতি, জীবন ক্রিয়া, পরিবেশের সাথে নির্ভরশীলতা, স্থায়ীত্ব, বংশবিস্তার প্রভৃতি একেঅপরের সাথে সমগ্র জীবজগৎ নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত।
            বিভিন্ন জৈব ও অজৈব বস্তুর সমন্বয়ের ফলে জীবদেহের উৎপত্তি ঘটে। গঠনগত ও কার্যগতভাবে জড় বস্তু সমূহের সুষ্ঠু সমন্বয় ও বিশেষ ভৈত রাসায়নিক সাম্যাবস্থার ফলে নতুন বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে জীবনের জন্ম হয়।

জীবন কি? (What is life?) :
                                              জীবন কি? বা, জীবন কাকে বলে? এই প্রশ্নের জবাব এক কথায় দেওয়া অসম্ভব। জীবের নানারকম বৈশিষ্ট্য, জীবদেহের নানান কার্যকলাপ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন জীববিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন রূপে জীবনকে সংজ্ঞা বদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। ‘জীবন’ সম্পর্কে জীববিজ্ঞানীদের উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা গুলি হ’ল—
            
              👉বৃদ্ধি, প্রজনন, পরিব্যক্তি, ও বিবর্তন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য প্রকাশকারী এবং প্রোটোপ্লাজমের সুসংবদ্ধ জটিল  জৈববস্তুর বিকশিত শক্তিকে জীবন বলে।
              👉পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম জটিল সুসংগঠিত প্রোটোপ্লাজমের সুনির্দিষ্ট শক্তির বহিঃপ্রকাশই হল জীবন।
                👉যে সংগঠিত শক্তির সক্ষমতায় কোনো বস্তুর    জনন সম্পন্ন হয় এবং বৃদ্ধি, বিপাক, স্বাতন্ত্র্য গুণাবলী, নির্দিষ্ট জীবনচক্র প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়, তাকে জীবন বলে।
                👉পরিবেশের সাথে জীবের ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে শক্তির সুনির্দিষ্ট ক্রমবিকাশকে জীবন বলে।

জীবনের অস্তিত্বে জীবের বৈশিষ্ট্য :

1. জনন (Reproduction) :-
                যে প্রক্রিয়ায় জীব নিজ সত্ত্বা ও আকৃতি বিশিষ্ট অপত্য জীব সৃষ্টি ক’রে নিজ প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে তাকে জনন বলে।
2.বৃদ্ধি (Growth) :-
                 জীবদেহের আকার, আয়াতন বা ভরের স্থায়ীভাবে বেড়ে যাওয়াকে বৃদ্ধি বলে।
3.বিপাক (Metabolism) :-
                  জীবদেহে যে সকল ধারাবাহিক রাসায়নিক বিক্রিয়া অনবরত ঘটে চলেছে তাদের সামগ্রিক ভাবে বিপাক বলে।
4.উত্তেজিতা (Irritability) :-
                   উদ্দিপকের প্রভাবে জীবের সারা দেওয়ার ক্ষমতা বা ধর্মকে উত্তেজিতা বলে।
5.প্রোটোপ্লাজমীয় গঠন (Protoplasmic structure) :-
                   কোষের অর্ধতরল জেলির ন্যায় সজীব পদার্থ কে প্রোটোপ্লাজম বলে। প্রত্যেক জীব এক বা একাধিক কোষ দ্বারা গঠিত। প্রোটোপ্লাজমই জীবের প্রাণ পদার্থ।
6.ছন্দবদ্ধতা (Rhythmicity) :-
                    জীবদেহের চলন বা গমন, বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি সবকিছুর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ছন্দোবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়।
7.পরিব্যক্তি (Mutation) :-
                     জীবদেহের প্রোটোপ্লাজমের রাসায়নিক সংগঠনের (জিনগত) আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে নতুন প্রজাতির জীবের উৎপত্তি হওয়াকে পরিব্যক্তি বলে।
8.অভিযোজন (Adaptation) :-
                      যে সকল বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী নির্দিষ্ট কোনো জীবকে তার নিজস্ব পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকে সাহায্য করে, তাকে অভিযোজন বলে।
9.জন্ম ও মৃত্যু (Birth & Death) :-          
                       প্রত্যেক জীবের জন্ম এবং মৃত্যু আছে।
10.জীবন-চক্র (Life cycle) :-
                        জন্ম, বৃদ্ধি, বংশবিস্তার, বার্ধক্য অবস্থা ও মৃত্যু এই পর্যায়ক্রমিক দশাগুলির সমষ্টিকে জীবন-চক্র বলে।