♥♥♥ তামাক হল মৃত্যুর টিকিট ♥♥

 

তামাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব যেমন বিশ্ব জুড়ে অপরিসীম, ঠিক তেমনি ধীর বিষক্রিয়া হিসাবে মৃত্যুর নিশ্চিত টিকিট ধরাতেও প্রথম সারির আধিপত্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে ১৩০ কোটি লোক তামাক ব্যবহার করেন নিয়মিত। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ হল সেই দেশের জনগণ যেখানে লোকের রোজগার স্বল্প এবং মাঝারি। এতটাই এর আকর্ষণ যে মানুষ খাদ্য বা বাসস্থানের অভ্যাস পরিবর্তনের প্রশ্নে ভাবনা-চিন্তা করতে পারেন, কিন্তু তামাকের প্রশ্নে একেবারেই নয়‌‌। ফল হিসেবে অবশ্যম্ভাবী একের পর এক রোগ। যার মধ্যে মারণব্যাধি ক্যানসার যেমন আছে, তেমনই আছে শ্বাসকষ্ট-সহ অন্যান্য গুরুতর অসুখ।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা চিকিৎসক সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘তামাক ছাড়ার ক্ষেত্রে যেটা সবার আগে দরকার সেটা হল সচেতনতা। সিগারেটের প্যাকেট বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের গায়ে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ দেওয়া থাকে। এটা পড়ার পরেও কিন্তু লোকে ওই জিনিস কিনছেন। অর্থাৎ সচেতনতার অভাব। এটা না বাড়লে কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়াটা মুশকিল। কারণ তামাক ব্যবহারকারীরা শুধু নিজেদের ক্ষতি করছেন না, পরিবেশেরও ক্ষতি করছেন।’

বহু লোক আছেন যাঁরা তামাকের নেশা ধরে ফেলেও ছাড়তে চাইছেন। যাঁদের কাছে খুব উপকারী হতে পারে এই সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্লিনিকগুলি। যেটা সরকারি হাসপাতালেও আছে। ব্যারাকপুরের টেকনো গ্লোবাল হসপিটালে কর্মরত বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ সৌম্য ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘রাজ্যের অনেক সরকারি হাসপাতালেই ‘স্মোকিং সিসেশন ক্লিনিক’ আছে। তামাক ছাড়তে ইচ্ছুকরা সেখানে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। যাঁদের কাউন্সেলিং করে ছাড়ানো সম্ভব তাঁদের কাউন্সেলিং করে ছাড়ানো হয়। আবার প্রয়োজনে ওষুধও দেওয়া হয়।’

তাঁর কথায়, ‘সিগারেট, বিড়িতে সব থেকে বেশি হয় ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি। হতে পারে করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং ক্যানসারের মতো রোগ। হতে পারে অন্যান্য অসুখও। এই রোগগুলোর চিকিৎসা কিন্তু ব্যয়বহুল। বিশেষ করে সিওপিডিতে হার্ট অ্যাটাক বা ফুসফুসে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। এই মুহূর্তে সিওপিডি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের মধ্যেও এই রোগটা কিন্তু বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে খুব বেশি দেরি হওয়ায় আগে এই নেশাটা ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।’

বিশ্বে প্রতি চার সেকেন্ডে একজন করে তামাক ব্যবহারকারী মারা যাচ্ছেন। ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিকে কর্মরত বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ চন্দন সিট বলেন, ‘বিশ্বে প্রতি বছর তামাকের ব্যবহারের জন্য মারা যান ৮০ লক্ষ মানুষ। ভারত হল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তামাক উৎপাদনকারী, রপ্তানিকারক এবং ব্যবহারকারী দেশ। তামাক প্রতিরোধে আইনটি যেমন কঠোরভাবে ব্যবহার করা উচিত, তেমনই সরকারের উচিত তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার শ্রমিকদের বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা করে এই কারখানা বন্ধ করা।’

এদেশে মুখের ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা যথেষ্টই বেশি। যার একটা বড় কারণ হল কাঁচা তামাকের ব্যবহার। খৈনি, জর্দার মতো তামাকজাত পণ্যের মাধ্যমে যা শরীরে ঢোকে। সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ডেন্টাল সার্জন শান্তনু পাতসা জানিয়েছেন, ‘পানে যে সুপুরি খাওয়া হয় তার রস থেকে মুখের ভেতর ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস হয়। এর সঙ্গে যদি জর্দা বা খৈনি ব্যবহারের অভ্যাস থাকে তবে কিন্তু সেটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। খৈনি, জর্দা, গুড়াখুর মতো কাঁচা তামাকের যে বিভিন্ন রূপ আছে সেগুলোর ব্যবহার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের কাছে সিগারেট বিক্রি করতে কেউ অস্বীকার করতে পারেন। কিন্তু জর্দা পানের ক্ষেত্রে কিন্তু নিয়মটা আদৌ কঠিন নয়। কাঁচা তামাক কিন্তু ভীষণ ভয়ঙ্কর। ফলে একটাই কথা- তামাকের নেশা ছাড়ুন।’

তামাক থেকে দূরে থাকুন
অমূল্য শরীর সুস্থ্য রাখুন ,
আপন জনের কথা ভাবুন
মৃত্যু মিছিল বন্ধ করুন।

তামাক ছাড়ুন, তামাক ছাড়ুন
তামাক মুক্ত বিশ্ব গড়ুন।

                             *****